পশ্চিমবঙ্গ সংবাদদাতা:পশ্চিমবাংলায় বিধানসভা নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি ছেড়ে ততই তাদের কর্মী–সমর্থকদের তৃণমূলে যোগদান বেড়ে চলেছে। বিষয়টির পেছনে বিজেপির অধিকাংশ নেতারই যুক্তি, নানা ভাবে ভয় দেখিয়ে বিজেপি কর্মীদের তৃণমূল যোগ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। বিজেপির অভিযোগ পুরোপুরি উড়িয়ে দিচ্ছেন না রাজ্যের রাজনীতি বিশেষজ্ঞরাও। তবে বিষয়টিকে হাল্কা ভাবে নিতে রাজি নন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। তাই দুর্গাপুজোর আগেই রাজ্যে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। মূলত বিজেপি কর্মীদের মনোবল বাড়াতেই তাঁর রাজ্যে আসা বলে জানা গিয়েছে। তাঁর সঙ্গে রাজ্যে আসতে পারেন বিজেপির বর্তমান সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ (জেপি) নাড্ডাও।
তাঁদের বাংলায় আসার খবর সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন রাজ্যের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বলেন, ‘দিল্লি ও কলকাতায় আগেই আমরা সাংগঠনিক বৈঠক করেছিলাম। সেই বৈঠকের সমস্ত বক্তব্য আমরা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছিলাম। সেই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় বিজেপি রাজ্য সম্পর্কে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই অনুযায়ীই রাজ্য জুড়ে এবার বিজেপির কর্মসূচি শুরু হয়ে যাবে। সেই সূত্র ধরেই অমিত শাহ পুজোর আগেই বাংলায় আসছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এর আগেও অমিত শাহ রাজ্যে এসেছেন। কিন্তু মাঝে তিনি অসুস্থ থাকায় আর আসেননি। এখন তিনি সুস্থ। তাই ফের রাজ্যে আসবেন।’ জানা গিয়েছে, রাজ্যে এসে অমিত শাহ উত্তরবঙ্গে বৈঠক করবেন। উল্লেখ্য, লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির কাছে পর্যুদস্ত হয়েছিল তৃণমূল। গেরুয়া শিবিরের কৌশলের কাছে একেবারে নাস্তানাবুদ হয়ে গিয়েছিল রাজ্যের শাসক দল।
তাই শাসক দল তৃণমূলেরও নিশানায় এবার রয়েছে উত্তরবঙ্গ। তাই সোমবারই উত্তরবঙ্গে গিয়েছিলেন তৃণমূল দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভিন্ন জায়গায় তিনি প্রশাসনিক বৈঠক করেছেন। দরাজ হাতে উন্নয়নের নানা প্রকল্পের কথা ঘোষণা করে এসেছেন সেখানকার জেলাগুলিতে। বৃহস্পতিবার তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন। কেন্দ্রীয় বিজেপিও এবার রাজ্যের ভোটকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে। দলের সাংগঠনিক দায়িত্ব এখন সামলাচ্ছেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়, অরবিন্দ মেনন, শিবপ্রকাশরা। তবে সূত্রের খবর, বাংলার ভোট এবার দেখবেন স্বয়ং অমিত শাহ নিজেই। এদিকে, বাংলায় নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে ইতিমধ্যেই বৈঠক করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা, সহসভাপতি মুকুল রায়, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, বাংলার পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, শিবপ্রকাশ এবং অরবিন্দ মেমন।
জানা গিয়েছে, বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের জন্য একটি কমিটি তৈরি করা হচ্ছে বিজেপিতে। তার মাথায় থাকবেন স্বয়ং মুকুল রায়ই। প্রসঙ্গত, গত লোকসভা নির্বাচনেও এমন কমিটি তৈরি করেছিল বিজেপি। কিন্তু সেই বৈঠকে মুকুলের কোনও পদ ছিল না। শোনা যাচ্ছে, রাজ্যে তৃণমূলকে বধ করতে তৃণমূল থেকে আসা মুকুল রায়ের ওপরই অনেকটাই নির্ভর করছেন অমিত শাহ–জেপি নাড্ডারা। তাই তাঁকেই সামনের নির্বাচন সামলানোর কমিটিকে নেতৃত্ব দিতে হতে পারে। ওই কমিটিই নির্বাচনে বিজেপির লড়াইয়ের সমস্ত কৌশল তৈরি করবে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচারও কী ভাবে চালানো হবে, তাও স্থির করবে ওই কমিটি। রাজ্যে বাম জমানার অবসান ঘটাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেকটাই নির্ভর করেছিলেন এই মুকুল রায়ের কৌশলের ওপরই। এবার বিজেপিও তৃণমূলকে ক্ষমতাচ্যুত করতে তাঁর কৌশলকেই গুরুত্ব দিতে চাইছে।